শবে বরাত ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা : পর্ব-২

শবে বরাত ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা : পর্ব-২

Author:
Price:

READ MORE

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে

শবে বরাত সম্পর্কিত প্রচলিত আকীদাহ বিশ্বাস  ‘আমল
শবে বরাত যারা পালন করেন তারা শবে বরাত সম্পর্কে যে সকল ধারণা পোষণ করেন  উহাকে উপলক্ষ করে যে সকল কাজ করে থাকেন তার কিছু নিম্নে উল্লেখ করা হল
তারা বিশ্বাস করে যে,শবে বরাতে আল্লাহ তাআলা সকল প্রাণীর এক বছরের খাওয়া দাওয়া বরাদ্দ করে থাকেন। এই বছর যারা মারা যাবে  যারা জন্ম নিবে তাদের তালিকা তৈরী করা হয়।
 রাতে বান্দার পাপ ক্ষমা করা হয়।  রাতে ইবাদাত-
বন্দেগী করলে সৌভাগ্য অর্জিত হয়।  রাতে কুরআন মাজীদ লাওহে মাহফুজ হতে প্রথম আকাশে নাযিল করা হয়েছে।  রাতে গোসল করাকে সওয়াবের কাজ মনে করা হয়। মৃত ব্যক্তিদের রূহ  রাতে দুনিয়ায় তাদের সাবেক গৃহে আসে।  রাতে হালুয়া রুটি তৈরী করে নিজেরা খায়  অন্যকে দেয়া হয়। বাড়ীতে বাড়ীতে মীলাদ পড়া হয়। আতশবাযী করা হয়। সরকারীবেসরকারী ভবনে আলোক সজ্জা করা হয়। সরকারী ছুটি পালিত হয়। পরের দিন রোযা (রোযাপালন করা হয়  কবরস্থানগুলো আগরবাতি  মোমবাতি দিয়ে সজ্জিত করা হয়। লোকজন দলে দলে কবরস্থানে যায়। মাগরিবের পর থেকে মাসজিদগুলি লোকে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। যারা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে  জুমুআয় মাসজিদে আসেনা তারাও  রাতে মাসজিদে আসে। মাসজিদগুলিতে মাইক চালু করে ওয়াজ নাসীহাত করা হয়। শেষ রাতে সমবেত হয়ে দু-মুনাজাত করা হয়। বহু লোক  রাতে ঘুমানোকে অন্যায় মনে করে থাকে। নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে একশত রাকাত,হাজার রাকাত ইত্যাদি সালাত আদায় করা হয়
লোকজন ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞেস করে ‘হুজুরশবে বরাতের সালাতের নিয়ম  নিয়্যতটা একটু বলে দিন। ইমাম সাহেব আরবী  বাংলায় নিয়্যাত বলে দেন। কিভাবে সালাত আদায় করবেকোন্‌ রাকাআতে কোন সূরা তিলাওয়াত করবে তাও বলে দিতে কৃপণতা করেননা
যদি  রাতে ইমাম সাহেব বা মুয়াজ্জিন সাহেব মাসজিদে অনুপস্থিত থাকেন তাহলে তাদের চাকুরী যাওয়ার উপক্রম হয়
শবে বরাতের সম্পর্ক শুধু ‘আমলের সাথে নয়
শবে বরাত সম্পর্কে উপরোল্লিখিত কাজ  আকীদাহসমূহ শবে বরাত উদযাপনকারীরা সকলেই করেন তা কিন্তু নয়। কেহ আছেন উল্লিখিত সকল কাজের সাথে একমত পোষণ করেন। আবার কেহ আতশবাযী,আলোকসজ্জা পছন্দ করেন না,কিন্তু কবরস্থানে যাওয়া,হালুয়া-রুটি,ইবাদাত-বন্দেগী করে থাকেন। আবার অনেক আছেন যারা  রাতে শুধু সালাত আদায় করেন  পরের দিন রোযা (রোযাপালন করেন।  ছাড়া অন্য কোন ‘আমল করেন না। আবার অঞ্চল ভেদে ‘আমলের পার্থক্য দেখা যায়
কিন্তু একটি বিষয় হল,শবে বরাত সম্পর্কে যে সকল ধর্ম বিশ্বাস বা আকীদাহ পোষণ করা হয় তা কিন্তু কোন দুর্বল হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত হয় না। যেমন ভাগ্যলিপি  বাজেট প্রনয়নের বিষয়টি। যারা বলেন  
‘‘আমলের ফাযীলাতের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীস গ্রহণ করা যায়অতএব এর উপর ভিত্তি করে শবে বরাতে ‘আমল করা যায়,তাদের কাছে আমার প্রশ্ন  তাহলে শবে বরাতের আকীদাহ সম্পর্কে কি দুর্বল হাদীসেরও দরকার নেই?
অথবা  সকল প্রচলিত আকীদাহর ক্ষেত্রে যদি কোন দুর্বল হাদীস পাওয়াও যায় তাহলে তা দিয়ে কি আকীদাহগত কোন মাসয়ালা প্রমাণ করা যায়?
আপনারা শবে বরাতের ‘আমলের পক্ষ সমর্থন করলেন কিন্তু আকীদাহর ব্যাপারে কি জবাব দিবেন?
কাজেই শবে বরাত শুধু ‘আমলের বিষয় নয়আকীদাহরও বিষয়। তাই  ব্যাপারে ইসলামের দায়ীদের সতর্ক হওয়ার দাওয়াত দিচ্ছি
শবে বরাত সম্পর্কে  বিশ্বাস পোষণ করা যে,আল্লাহ তাআলা  রাতে আল-
কুরআন অবতীর্ণ করেছেন,তিনি  রাতে মানুষের হায়াতরিয্  ভাগ্যের ফায়সালা করে থাকেন রাতে ইবাদাত-
বন্দেগীতে লিপ্ত হলে আল্লাহ হায়াত  রিয্ বাড়িয়ে সৌভাগ্যশালী করেন ইত্যাদি আকীদা কি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি মিথ্যা আরোপ করার মত অন্যায় নয়?
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন :
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ.
তার চেয়ে বড় যালিম আর কে যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে? [1]
শাবানের মধ্যরজনীর ফযীলত সম্পর্কিত হাদীসসমূহের পর্যালোচনা
শাবান মাসের মধ্যরজনীর ফযীলত সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীসের বর্ণনা এসেছে,নিম্নে সে সকল হাদীস সম্পর্কে একটি পর্যালোচনা উপস্থাপন করা হলো। যেমন হাদীসের এক বর্ণনায় এসেছে,
1-حدثنا أحمد بن منيع أخبرنا يزيد بن هارون أخبرنا الحجاج بن أرطاة عن يحيى بن أبي كثير عن عروة عن عائشة رضى الله عنها قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة فخرجت فإذا هو بالبقيع فقال أكنت تخافين أن يحيف الله عليك ورسوله؟ قلت يا رسول الله ظننت أنك أتيت بعض نسائكفقال إن الله تبارك وتعالى ينزل ليلة النصف من شعبان إلى سماء الدنيا فيغفر لأكثر من عدد شعر غنم كلبقال أبو عيسىحديث عائشة لا نعرفه إلا من هذا الوجه من حديث الحجاج، وسمعت محمدا يقول يضعف هذا الحديث، وقاليحيى بن كثير لم يسمع من عروة، قال محمد والحجاج لم يسمع من يحيى بن كثير، انتهى كلامه، فهذا السند منقطع بوجهين.
ইমাম তিরমিযী (রহঃবলেন  আমাদের কাছে আহমাদ ইবনে মুনীহাদীস বর্ণনা করেছেন যে তিনি ইয়াযীদ ইবনে হারূন থেকে,তিনি হাজ্জাজ ইবনে আরতাহ থেকে,তিনি ইয়াহইয়া ইবনে আবি কাসির থেকে,তিনি উরওয়াহ থেকে,তিনি উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাঃথেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেন  আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিছানায় পেলাম না তাই আমি তাকে খুঁজতে বের হলাম,‘বাকীনামক কবরস্থানে তাকে পেলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামবললেন  তুমি কি আশংকা করেছো যে আল্লাহ  তার রাসূল তোমার সাথে অন্যায় আচরণ করবেন?
আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূলআমি মনে করেছি আপনি আপনার অন্য কোন স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মধ্য শাবানের রাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন,অতঃপর কালব গোত্রের পালিত বকরীর পশমের পরিমানের চেয়েও অধিক পরিমান লোকদের ক্ষমা করেন
ইমাম তিরমিযী বলেন  আয়িশা (রাঃএর এই হাদীস আমি হাজ্জাজের বর্ণিত সনদ (সূত্রছাড়া অন্য কোনভাবে চিনি না। আমি মুহাম্মাদকে (ইমাম বুখারীবলতে শুনেছি যে,তিনি হাদীসটিকে দুর্বল বলতেন। তিরমিযী (রহঃবলেন  ইয়াহ্ইয়া ইবনে কাসীর উরওয়াহ থেকে হাদীস শুনেননি। এবং মুহাম্মদ (ইমাম বুখারীবলেছেন  হাজ্জাজ ইয়াহ্ইয়াহ ইবনে কাসীর থেকে শুনেননি
 হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম বুখারী  ইমাম তিরমিযীর মন্তব্যে প্রমাণিত হয় যে,হাদীসটি দুটো দিক থেকে মুনকাতি অর্থাৎ উহার সূত্র থেকে বিচ্ছিন্ন
অপর দিকে  হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হাজ্জাজ ইবনে আরতাহ মুহাদ্দিসীনদের নিকট দুর্বল বলে পরিচিত
সম্মানিত পাঠকবৃন্দযারা শবে বরাতের বেশী বেশী ফাযীলাত বয়ান করতে অভ্যস্ত তারা তিরমিযী বর্ণিত  হাদীসটি খুব গুরুত্বের সাথে উপস্থাপন করেন অথচ যারা হাদীসটির অবস্থা সম্পর্কে ভাল জানেন তাদের  মন্তব্যটুকু গ্রহণ করতে চাননা।  হাদীসটি ‘আমলের ক্ষেত্রে পরিত্যাজ্য হওয়ার জন্য ইমাম তিরমিযীর  মন্তব্যটুকু কি যথেষ্ট নয়?
যদি তর্কের খাতিরে  হাদীসটিকে বিশুদ্ধ বলে ধরে নেয়া হয় তাহলে কি প্রমাণিত হয়?আমরা যারা ঢাকঢোল পিটিয়ে মাসজিদে একত্র হয়ে যেভাবে শবে বরাত উদযাপন করি তাদের ‘আমলের সাথে  হাদীসটির মিল কোথায়?
বরং  হাদীসে দেখা গেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিছানা ছেড়ে চলে গেলেন,আর পাশে শায়িত আয়িশা (রাঃকে ডাকলেন না। ডাকলেন না অন্য কাউকে। তাকে জাগালেন না বা সালাত আদায় করতে বললেন না। অথচ আমরা দেখতে পাই যে,রামাযানের শেষ দশকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে রাত জেগে ইবাদাত-বন্দেগী করতেন এবং পরিবারের সকলকে জাগিয়ে দিতেন। বেশী পরিমাণে ইবাদাত-বন্দেগী করতে বলতেন। যদি ১৫ শাবানের রাতে কোন ইবাদাত করার ফাযীলাত থাকত তাহলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেন আয়িশাকে (রাঃবললেন না?কেন রামাযানের শেষ দশকের মত সকলকে জাগিয়ে দিলেন না,তিনি তো নেক কাজের প্রতি মানুষকে আহ্বান করার ক্ষেত্রে আমাদের সকলের চেয়ে অগ্রগামী ছিলেন।  ব্যাপারে তিনি তো কোন অলসতা বা কৃপণতা করেননি
 নং হাদীস
2-عن العلاء بن الحارث أن عائشة رضي الله عنها قالت قام رسول الله صلى الله عليه وسلم من الليل يصلي، فأطال السجود، حتى ظننت أنه قد قبض، فلما رأيت ذلك قمت حتى حركت إبهامه فتحرك فرجعت فلما رفع رأسه من السجود وفرغ من صلاته قاليا عائشة أو يا حميراء أظننت أن النبي قد خان بك؟ قلت لا والله يا رسول الله، لكني ظننت أنك قبضت لطول سجودك، فقال أتدرين أي ليلة هذه؟ قلتالله ورسوله أعلمقالهذه ليلة النصف من شعبان
إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين ويرحم المسترحمين ويؤخر أهل الحقد كما هو. (رواه البيهقي في شعب الإيمان، وهذا حديث مرسل لأن علاء ما سمع عن عائشة)
আলা ইবনে হারিস থেকে বর্ণিতআয়িশা (রাঃবলেনএক রাতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। সিজদাহ এত দীর্ঘ করলেন যে,আমি ধারণা করলাম তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আমি  অবস্থা দেখে দাড়িয়ে তার বৃদ্ধাঙ্গুল ধরে নাড়া দিলাম,আঙ্গুলটি নড়ে উঠল। আমি চলে এলাম। সালাত শেষ করে তিনি বললেন  হে আয়িশা অথবা বললেন হে হুমায়রাতুুমি কি মনে করেছ আল্লাহর নবী তোমার সাথে বিশ্বাস ভংগ করেছেন?আমি বললাম  আল্লাহর কসম হে রাসূলআমি এমন ধারণা করিনি। বরং আমি ধারণা করেছি আপনি না জানি ইন্তেকাল করলেনঅতঃপর তিনি বললেন  তুমি কি জান এটা কোন রাত?আমি বললাম  আল্লাহ  তাঁর রাসূল ভাল জানেন। তিনি বললেন  এটা মধ্য শাবানের রাত।  রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি মনোনিবেশ করেন। ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং রাহমাত প্রার্থনাকারীদের রহম করেন। আর হিংসুকদেরকে তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দেন।[2]
হাদীসটি মুরসাল। সহীহ বা বিশুদ্ধ নয়  কেননা বর্ননাকারী ‘আলাআয়িশা (রাঃথেকে শুনেননি
 নং হাদীস
3-عن علي بن أبي طالب رضي الله عنه قالقال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها فإن الله ينـزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا فيقول ألا من مستغفر فأغفر له ألا من مسترزق فأرزق له ألا من مبتلى فأعافيه ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر. (رواه ابن ماجه، والبيهقي في شعب الإيمانوهذا حديث ضعيف لأن في سنده ابن أبي سبرة وهو معروف بوضع الحديث عند المحدثينالمرجع تحفة الأحوذي بشرح جامع الترمذي وقال ناصر الدين الألباني في هذا الحديثإنه واه جداً)
আলী ইবনে আবী তালেব (রাঃথেকে বর্ণিত,তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন  যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা রাত জেগে সালাত আদায় করবে আর দিবসে রোযা পালন করবে। কেননা আল্লাহ তাআলা সূর্যাস্তের পর দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে বলেন  আছে কি কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিয্ প্রার্থনাকারী আমি রিয্ দান করব। আছে কি কোন বিপদে নিপতিত ব্যক্তি আমি তাকে সুস্থ্যতা দান করব। এভাবে ফজর পর্যন্ত বলা হয়ে থাকে।[3]
প্রথমতঃ  হাদীসটি দুর্বল। কেননা  হাদীসের সনদে (সূত্রেইবনে আবি সাবুরাহ নামে এক ব্যক্তি আছেনযিনি অধিকাংশ হাদীস বিশারদের নিকট হাদীস জালকারী হিসাবে পরিচিত।  যুগের বিখ্যাত মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন আল-
বানী (রহঃবলেছেন : হাদীসটি সনদের দিক দিয়ে একেবারেই দুর্বল
দ্বিতীয়তঃ অপর একটি সহীহ হাদীসের বিরোধী হওয়ার কারণে  হাদীসটি গ্রহণযোগ্য নয়। সে সহীহ হাদীসটি হাদীসে নুযুল নামে পরিচিত,যা ইমাম বুখারী  মুসলিম তাদের কিতাবে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি হল 
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قالينزل ربنا تبارك وتعالى في كل ليلة إلى سماء الدنيا حين يبقى ثلث الليل الآخر فيقول من يدعوني فأستجيب له ومن يسألني فأعطيه ومن يستغفرني فأغفرله.
আবূ হুরাইরা (রাঃথেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন  আমাদের রব আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন  বলতে থাকেন  কে আছ আমার কাছে দু করবে আমি কবুল করব। কে আছ আমার কাছে চাইবে আমি দান করব। কে আছ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করব।[4]
আর উল্লিখিত  নং হাদীসের বক্তব্য হল আল্লাহ তাআলা মধ্য শাবানের রাতে নিকটতম আকাশে আসেন  বান্দাদের দু কবুলের ঘোষণা দিতে থাকেন। কিন্তু বুখারী  মুসলিম বর্ণিত এই সহীহ হাদীসের বক্তব্য হল আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষের দিকে নিকটতম আকাশে অবতরণ করে দু কবুলের ঘোষণা দিতে থাকেন। আর  হাদীসটি সর্বমোট ৩০ জন সাহাবী বর্ণনা করেছেন এবং বুখারী এবং মুসলিম  সুনানের প্রায় সকল কিতাবে এসেছে। তাই হাদীসটি প্রসিদ্ধ। অতএব এই মশহুর হাদীসের বিরোধী হওয়ার কারণে  নং হাদীসটি পরিত্যাজ্য হবে
কেহ বলতে পারেন যে,এই দু হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কারণ  নং হাদীসের বক্তব্য হল আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন মধ্য শাবানের রাতের শুরু থেকে। আর  হাদীসের বক্তব্য হল প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। অতএব দু হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধ নেই যে কারণে  নং হাদীসকে পরিত্যাগ করতে হবে
আমি বলব আসলেই  দু হাদীসের মধ্যে বিরোধ আছে। কেননা আবূ হুরাইরা (রাঃবর্ণিত বুখারী  মুসলিমের হাদীসের বক্তব্য হল আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষ অংশে দুনিয়ার আকাশে আসেন। আর প্রতি রাতের মধ্যে শাবান মাসের পনের তারিখের রাতও অন্তর্ভুক্ত। অতএব  হাদীস মতে অন্যান্য রাতের মত শাবান মাসের পনের তারিখের রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে আসেন। কিন্তু  নং হাদীসের বক্তব্য হল শাবান মাসের পনের তারিখের রাতের প্রথম প্রহর থেকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন
 নং হাদীস
4-عن عثمان بن أبي العاص رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قالإذا كان ليلة النصف من شعبان نادى مناد هل من مستغفر فأغفرله، هل من سائل فأعطيه ، فلا يسأل أحد إلا أعطي إلا زانية بفرجها أو مشرك. (أخرجه البيهقي في شعب الإيمان وضعفه الألباني في ضعيف الجامع رقم 652)
উসমান ইবনে আবিল আস (রাঃথেকে বর্ণিত,রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন  যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দেয়  আছে কি কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কেহ কিছু চাইবার আমি তাকে তা দিয়ে দিব। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন  মুশরিক  ব্যভিচারী বাদে সকল প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করা হয়।”[5]
বিখ্যাত মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন আল-বানী (রহঃহাদীসটিকে তার সংকলন ‘যয়ীফ আল-জামেনামক কিতাবের ৬৫২ নং ক্রমিকে দুর্বল প্রমাণ করেছেন
শবে বরাত সম্পর্কে  ছাড়া বর্ণিত অন্যান্য সকল হাদীস সম্পর্কে ইবনে রজব হাম্বলী (রহঃবলেন   মর্মে বর্ণিত অন্য সকল হাদীসই দুর্বল
শাবানের মধ্যরজনীর সম্পর্কিত হাদীসসমূহ পর্যালোচনার সারকথা
শবে বরাত সম্পর্কিত হাদীসগুলো উল্লেখ করা হল। আমি মনে করি  সম্পর্কে যত হাদীস আছে তা এখানে এসেছে। বাকী যা আছে সেগুলোর অর্থ বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত।  সকল হাদীসের দিকে লক্ষ্য করে আমরা কয়েকটি বিষয় স্পষ্টভাবেই বুঝে নিতে পারি
 সকল হাদীসের কোন একটি দ্বারাও প্রমাণিত হয়নি যে,
১৫ শাবানের রাতে আল্লাহ তাআলা আগামী এক বছরে যারা ইন্তেকাল করবে,যারা জন্ম গ্রহণ করবে,কে কি খাবে সেই ব্যাপারে ফায়সালা করেন। যদি থাকেও তাহলে তা আল-
কুরআনের বক্তব্যের বিরোধী হওয়ায় তা গ্রহণ করা যাবে না। কারণ আল-
কুরআনের স্পষ্ট কথা হল  বিষয়গুলির ফায়সালা হয় লাইলাতুল কদরে
 সকল হাদীসের কোথাও বলা হয়নি যে, রাতে মৃত ব্যক্তিদের আত্মা তাদের গৃহে আসে। বরং এটি একটি প্রচলিত বানোয়াট কথা। মৃত ব্যক্তির আত্মা কোন কোন সময় গৃহে ফিরে আসার ধারণাটা হিন্দুদের ধর্ম-বিশ্বাস।
 সকল হাদীসের কোথাও  কথা নেই যে,আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম  সাহাবায়ে কিরাম  রাতে গোসল করেছেন,মাসজিদে উপস্থিত হয়ে নফল সালাত আদায় করেছেন,যিক্-আযকার করেছেন,কুরআন তিলাওয়াত করেছেন,সারারাত জাগ্রত থেকেছেন,ওয়াজ নাসীহাত করেছেন কিংবা অন্যদের  রাতে ইবাদাত বন্দেগীতে উৎসাহিত করেছেন অথবা শেষ রাতে জামাতের সাথে দু-মুনাজাত করেছেন
 হাদীসসমূহের কোথাও  কথা নেই যে,আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ রাতের সাহরী খেয়ে পরের দিন রোযা (রোযাপালন করেছেন
আলোচিত হাদীসসমূহে কোথাও  কথা নেই যে,আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবায়ে কিরাম  রাতে হালুয়া-
রুটি বা ভাল খানা তৈরী করে বিলিয়েছেন,বাড়ীতে বাড়ীতে যেয়ে মীলাদ পড়েছেন
 সকল হাদীসের কোথাও নেই যে,আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবায়েকিরাম (রাঃ রাতে দলে দলে কবরস্থানে গিয়ে কবর যিয়ারত করেছেন কিংবা কবরে মোমবাতি জ্বালিয়েছেন
এমনকি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ বাদ দিলে খুলাফায়ে রাশেদীনের ত্রিশ বছরের ইতিহাসেও কি এর কোন একটা ‘আমল পাওয়া যাবেযদি না যায় তাহলে শবে বরাত সম্পর্কিত  সকল ‘আমল  আকীদা কি বিদআত নয় বিদআত সম্পর্কে উম্মাতে মুহাম্মাদীকে সতর্ক করার দায়িত্ব কারা পালন করবেন? দায়িত্ব পালন করতে হবে আলেম-উলামাদের,দ্বীন প্রচারক,মাসজিদের ইমাম  খতীবদের। যে সকল বিষয়ে কুরআন  সহীহ হাদীসের ইশারা নেই সে সকল ‘আমল থেকে সাধারণ মুসলিম সমাজকে বিরত রাখার দায়িত্ব পালন করতে হবে নবী-রাসূলগণের উত্তরসূরীদের
তথ্যসূত্র :-
[]সূরা সাফ
[]বাইহাকী তার শুয়াবুল ঈমান কিতাবে বর্ণনা করেছেন
[]ইবনে মাজাহ  বাইহাকী
[]বুখারী  মুসলিম

[]বাইহাকীশুয়াবুল ঈমান

0 Reviews