READ MORE

এসো জান্নাতের পথে – পর্ব ২

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে


সংকলন: জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের |
সম্পাদক: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তিদের গুণাবলী

পূর্বের পর্বে আমরা জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তিদের পনেরটি  গুণাবলী আলোচনা করেছি আজ আরও পনেরটি গুণাবলী আলোচনা করা হচ্ছে।

ষোল- ইয়াতীমের লালন-পালন:-
ইয়াতীমের লালন পালনকারী জান্নাতি হবে। শুধু তাই না ইয়াতিমের লালন-পালনকারী জান্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে থাকবে। তাই আমাদের উচিত ইয়াতিমকে সাহায্য করা।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم«كَافِلُ الْيَتِيمِ لَهُ أَوْ لِغَيْرِهِ أَنَا وَهُوَ كَهَاتَيْنِ فِي الْجَنَّةِ وَأَشَارَ مَالِكٌ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى »

“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ইয়াতীমের লালন পালনকারী-ইয়াতীম তার আত্মীয় হোক আর অনাত্মীয়- ও আমি জান্নাতে এ দুই আঙ্গুলের ন্যায় এ বলে তিনি তাঁর দুই আঙ্গুলকে একত্রিত করে দেখালেন যে এভাবে এক সাথে থাকব। (হাদিসের বর্ণনাকারী) ইমাম মালেক (রহঃ) শাহাদাত ও মধ্যমাঙ্গুলির প্রতি ইশারা করে দেখিয়েছেন[1]।

عَنْ سهل رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم: «أنا وكَافِلُ الْيَتِيمِ في الجنة هكذا ِ وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى و فرج بينهما شيئا »

সাহাল রাদিয়াল্লাহ তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি এবং ইয়াতিমকে লালন-পালনকারী ব্যক্তি জান্নাতে কাছাকাছি থাকব। এবং তার শাহাদাত অঙ্গুলি এবং মধ্যমা আঙ্গুলীদ্বয় একত্রিত করে ইঙ্গিত করলেন এবং দুইয়ের মাঝে একটু ফাঁক করলেন[2]।
সতের- হজ্জে মাবরুরের বিনিময় জান্নাত:
হজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তা‘আলা হজের বিনিময় জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছেন। যার হজ্জ কবুল হবে  সে অবশ্যই জান্নাতি হবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم: «الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّةُ »

“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “এক ওমরা থেকে অপর ওমরার মাঝে যে পাপ করা হয়, পরবর্তী ওমরা তার জন্য কাফফারা। আর কবুল হজ্জের একমাত্র প্রতিদান হল জান্নাত[3]।”
আঠারো- মসজিদ নির্মাণ করা:
মসজিদ নির্মাণকারী জান্নাতি হবে, যে ব্যক্তি মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। প্রমাণ-

عَنْ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ رضى الله عنه قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ «مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلهِ بَنَى اللهُ لَهُ فِي الْجَنَّةِ مِثْلَهُ»

“ওসমান ইবন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ বানাবে আল্লাহ তার জন্য অনুরূপ একটি ঘর জান্নাতে নির্মাণ করবেন[4]।
উনিশ- লজ্জা-স্থান ও জিহ্বার হেফাজত করা:
লজ্জা-স্থান ও জিহ্বা সংরক্ষণকারী জান্নাতি হবে। লজ্জা-স্থান ও জিহ্বার হেফাজত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ দুটির কারণেই একজন মানুষের যাবতীয় বিপদ ও সব মুসিবত।

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولِ اللهُ صلى الله عليه وسلم : «مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْجَنَّةَ»

“সাহাল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি তার দাড়ি ও গোঁফের মধ্যবর্তী স্থান (মুখ) এবং তার উভয় পায়ের মধ্যবর্তী স্থান (লজ্জা স্থান) সংরক্ষণের জিম্মা গ্রহণ করবে আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মা গ্রহণ করব[5]।
বিশ- প্রতিবেশীর সাতে ভালো ব্যবহার করা:
প্রতিবেশীকে কষ্ট-দাতা জাহান্নামী হবে আর প্রতিবেশীর প্রতি উত্তম আচরণকারী জান্নাতি হবে। যারা জান্নাতে যেতে চায় তারা যেন তার কোন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهُ إِنَّ فُلَانَةَ تَصُوْمُ النَّهَارَ وَتَقُوْمُ اللَّيْلَ وَتُؤْذِي جِيرَانَهَا بِلِسَانِهَا قَالَ «هِيَ فِي النَّارِ» قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فُلَانَةٌ تُصَلِّيْ الْمَكْتُوْبَةَ وَتَصَدَّقَ بِالْأَثْوَارِ مِنْ الْأَقِطِ وَلَا تُؤْذِي جِيرَانَهَا قَالَ « هِيَ فِي الْجَنَّةِ »

“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অমুক মহিলা দিনে রোযা রাখে, রাতে তাহাজ্জুদ সালাত পড়ে, কিন্তু সে তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সে জাহান্নামী। অতঃপর সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করল যে, অন্য এক মহিলা শুধু ফরয সালাত আদায় করে, আর পনিরের এক টুকরা করে তা দান করে। কিন্তু সে তার প্রতিবেশীকে কোন কষ্ট দেয় না। তিনি বললেন: সে জান্নাতি[6]।
সুতরাং, যারা মানুষকে কষ্ট দেয় তাদের নফল ইবাদত কোন কাজে আসবে না। তাদের সালাত ও সাওম তাদেরকে জাহান্নামের আগুন হতে বাচাতে পারবে না। জাহান্নামের আগুন থেকে বাচতে হলে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে হলে, তাকে অবশ্যই মানুষকে কষ্ট দেয়া ছাড়তে হবে।
একুশ- আল্লাহর নিরানব্বই নাম মুখস্থ ও হেফাজত করা:
            আল্লাহর নিরানব্বই নাম মুখস্থ-কারী জান্নাতি হবে। অর্থাৎ আল্লাহর নামসমূহ জানা এবং নামসমূহের উপর যথাযথ ঈমান আনা এবং বাস্তব জীবনে নিজের মধ্যে আল্লাহর নামের বাস্তবায়ন ঘটানো। যে ব্যক্তি আল্লাহর নিরানব্বইটি নামের যথার্থটা রক্ষা করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم«إِنَّ لِلهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إِلَّا وَاحِدًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ »

“আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহর এক কম একশত অর্থাৎ: নিরানব্বই নাম আছে, যে ব্যক্তি তা মুখস্থ করবে সে জান্নাতে যাবে[7]।
বাইশ- কুরআনের হেফাজত ও হেফজ করা:
কুরআনের সংরক্ষণকারী জান্নাতে যাবে। যারা কুরআন পড়ে আল্লাহ তা‘আলা তাদের জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা দান করবে।

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم «يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ إِذَا دَخَلَ الْجَنَّةَ اقْرَأْ وَاصْعَدْ فَيَقْرَأُ وَيَصْعَدُ بِكُلِّ آيَةٍ دَرَجَةً حَتَّى يَقْرَأَ آخِرَ شَيْءٍ مَعَهُ»

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কুরআন সংরক্ষণকারী যখন জান্নাতে যাবে তখন তাকে বলা হবে কুরআন পাঠ করতে থাক এবং এক এক স্তর করে আরোহণ করতে থাক। তখন সে প্রত্যেক আয়াত পাঠের মাধ্যমে একেক স্তর করে আরোহণ করবে। এমনকি তার সংরক্ষিত (মুখস্থ কৃত) সর্বশেষ আয়াত পাঠ করে সে তার নির্দিষ্ট স্থানে আরোহণ করবে এবং সেটাই তার ঠিকানা হবে[8]।
তেইশ- সালাম বিনিময় করা:
            বেশি বেশি সালাম বিনিময়কারী জান্নাতি হবে। সালাম মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাষণ। সালামের দ্বারা মানুষের মধ্যে মহব্বত বৃদ্ধি পায় সু-সম্পর্ক ঘড়ে উঠে এবং সালাম জান্নাতে প্রবেশের কারণ হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের বেশি বেশি করে সালাম দেয়ার তাওফিক দান করুন। প্রমাণ-

عَنْ عَبْدِ اللهُ بْنِ عَمْرٍو رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم: «اعْبُدُوا الرَّحْمَنَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَأَفْشُوا السَّلَامَ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلَامٍ »

“আবদুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: হে মানব মণ্ডলী সালাম বিনিময় কর। মানুষকে আহার করাও, যখন মানুষ ঘুমন্ত থাকে তখন সালাত পড়। তাহলে নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে[9]।
অপর হাদিস, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

 «لا تدخلون الجنة حتى تؤمنوا، ولا تؤمنوا حتى تحابوا، أوَلا أدلّكم على شيء إذا فعلتموه تحاببتم؟ أفشوا السلام بينكم»

“তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি ঈমানদার না হবে, আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না তোমরা একে অপরকে ভালো না বাসবে। আর আমি কি তোমাদের এমন একটি জিনিস বাতিয়ে দেব, যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে? তোমরা তোমাদের নিজেদের মধ্যে সালামের প্রসার কর”।[10]
চব্বিশ- কোনো রুগীকে দেখতে যাওয়া:
 রুগীকে দেখাশোনা করা এবং কোনো রুগীর খোজ খবর নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো রুগী দেখতে যাওয়া ব্যক্তিকে জান্নাতের সু-সংবাদ দেন। প্রমাণ-

عَنْ ثَوْبَانَ رضى الله عنه مَوْلَى رَسُولِ اللهُ صلى الله عليه وسلم قَال قَال رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم«عَائِدُ الْمَرِيضِ فِي مَخْرَفَةِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَرْجِعَ »

“সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রুগীর দেখাশোনাকারী যতক্ষণ পর্যন্ত ঘরে ফিরে না আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে জান্নাতের বাগানে থাকে[11]।
পঁচিশ- দ্বীনি ইলম শিক্ষালাভকারী:
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দ্বীনের জ্ঞান অন্বেষণ উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে, কেউ পথিমধ্যে মারা গেলে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাত দান করবে। প্রমাণ-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه اَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ « مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللهُ لَهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ »

“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি দ্বীনি ইলম অর্জনের জন্য পথ চলে আল্লাহ্‌ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন[12]।
ছাব্বিশ-ওজুর পর কালিমায়ে শাহাদাত পড়া:
ভালো করে ওযু করার পর যে ব্যক্তি কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করবে, সে জান্নাতের আটটি দরজার মধ্য হতে যে কোন দরজা দিয়েই জান্নাতে প্রবেশ করবে। প্রমাণ-

عَنْ عُمَرَ بْنِ الخَطَّبِ رضي الله عنهما قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله: «مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ أَوْ فَيُسْبِغُ الْوَضُوءَ ثُمَّ يَقُولُ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللهُ وَرَسُولُهُ إِلَّا فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ » (رواه مسلم)

অর্থ, ওমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ভালো করে ওযু করে এবং ওযুর পর এ দুআ পড়ে, اَشْهَدُ أَنْ لَّا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ অর্থ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন কোন সত্য ইলাহ নাই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সে তখন যেটি দিয়ে খুশি সেটি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।[13]
সাতাশ- সকাল-সন্ধ্যা সায়্যেদুল ইস্তেগফার পাঠ করা:
যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার পাঠ করবে এবং সেদিন বা রাতে মারা জাবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাত দান করবে। প্রমাণ-

عَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «سَيِّدُ الِاسْتِغْفَارِ أَنْ تَقُولَ اللهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ قَالَ وَمَنْ قَالَهَا مِنْ النَّهَارِ مُوقِنًا بِهَا فَمَاتَ مِنْ يَوْمِهِ قَبْلَ أَنْ يُمْسِيَ فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَمَنْ قَالَهَا مِنْ اللَّيْلِ وَهُوَ مُوقِنٌ بِهَا فَمَاتَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِحَ فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ»

“সাদ্দাদ ইবন আওস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সায়্যেদুল ইস্তেগফার হল “আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বী লা ইলাহা ইল্লা আন্তা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা, ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাতু‘তু, আ‘উজুবিকা মিন সাররি মা সানা‘তু, আবুউলাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, আবুউ বিজানবী, ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজুনুবা ইল্লা আন্তা।
“হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রভু, তুমি ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য আর কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আর আমি হচ্ছি তোমার বান্দা, আর আমি আমার সাধ্যমত তোমার প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্টটা থেকে তোমার আশ্রয় কামনা করছি। আমার প্রতি তোমার নেয়ামতের স্বীকৃতি প্রদান করছি। আর আমি আমার গুনাহ খাতা স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর, নিশ্চয় তুমি ব্যতীত গুনাহ মাফকারী আর কেউ নেই। যে ব্যক্তি দৃঢ়বিশ্বাসসহ এ দো‘আ দিনের বেলা পাঠ করে, আর সন্ধার পূর্বে মৃত্যুবরণ করে সে জান্নাতি। আর যে ব্যক্তি রাতের বেলা একীনসহ এ দু’আ পাঠ করে এবং সকাল হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করে সেও জান্নাতি[14]।
আটাশ- অন্ধ ব্যক্তি যে ধৈর্য তার অন্ধত্বের উপর ধৈর্য ধারণ করে:
যার চোখ অন্ধ হয়ে গেল, আর সে তাতে ধৈর্যধারণ করল, তাকে আল্লাহ তা‘আলা তার অন্ধত্বের বিনিময়ে জান্নাত দান করবে। প্রমাণ-

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ  قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ «إِنَّ اللهَ قَالَ إِذَا ابْتَلَيْتُ عَبْدِي بِحَبِيبَتَيْهِ فَصَبَرَ عَوَّضْتُهُ مِنْهُمَا الْجَنَّةَ »

“আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন: আল্লাহ বলেন: আমি যখন আমার কোনো প্রিয় বান্দাকে তার দুটি প্রিয় অঙ্গ (চোখ দ্বারা) পরীক্ষা করি, আর সে তাতে ধৈর্যধারণ করে তখন এর বিনিময়ে আমি তাকে জান্নাত দান করি[15]।
উনত্রিশ- পিতা-মাতার হক আদায় ও তাদের খেদমত করা:
পিতা-মাতার হক ও তাদের খেদমত করা খুবই জরুরী। আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের হক আদায়ের পরেই পিতা-মাতার হককে বান্দার উপর ফরয করে দিয়েছেন। পিতা-মাতার হক আদায় করা দ্বারা একজন বান্দা জান্নাতে লাভ করবে এবং সে জান্নাতের দরজাসমূহ হতে যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। প্রমাণ-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ «رَغِمَ أَنْفُهُ رَغِمَ أَنْفُهُ رَغِمَ أَنْفُهُ مَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا فَلَمْ يَدْخُلْ الْجَنَّةَ »

“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন: ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধু-লুণ্ঠিত হোক, ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধু-লুণ্ঠিত হোক, ঐ ব্যক্তির নাক ধুলায় ধু-লুণ্ঠিত হোক, যে তার পিতা-মাতাকে বৃদ্ধ বয়সে পেল তাদের কোন একজনকে বা উভয়কে অথচ তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাত লাভ করতে পারল না[16]।
অপর হাদিসে বর্ণিত-

قال أبو الدرداء سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول :«الوالد أوسط أبواب الجنةفإن شئت فأضع ذلك الباب أو احفظه »

আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, পিতা-মাতা হচ্ছে, জান্নাতের দরজা সমূহের মধ্যম দরজা। অতএব, তুমি ইচ্ছা করলে সেই দরজা নষ্ট কর বা সংরক্ষণ কর[17]।
ত্রিশ-কষ্টদায়ক বস্তু রাস্তা থেকে দূর করা:
যে ব্যক্তি মুসলমানদের চলাচলের পথ থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্তু দূর করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। প্রমাণ-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ الشَّجَرَةَ كَانَتْ تُؤْذِي الْمُسْلِمِينَ فَجَاءَ رَجُلٌ فَقَطَعَهَا فَدَخَلَ الْجَنَّةَ »

“আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: একটি গাছ মুসলমানদেরকে কষ্ট দিতেছিল। তখন একব্যক্তি এসে তা কেটে দিল। এর বিনিময়ে সে জান্নাত লাভ করল[18]।

[1] মুসলিম, জুহুদ অধ্যায়,
[2] বুখারি, হাদিস: ৪৯৯৮
[3] বুখারি ও মুসলিম, ওমরা অধ্যায়।
[4] মুসলিম, যুহ্‌দ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদ নির্মানের ফযিলত বিষয়ে আলোচনা।
[5] বুখারী, হাদিস: ৬৪৭৪
[6] আহমদ, হাদিস নং-১৩৬।
[7] বুখারি মুসলিম আল লু লু ওয়াল মারজান, ২য় খণ্ড হাদিস নং-১৭১৪
[8] ইবনে মাযাহ, কিতাবুল আদাব, পরিচ্ছেদ, কুরআন তিলাওয়াতের সাওয়াব বিষয়ে আলোচনা: ২/৩০৪৭
[9] তিরমিযি, কিয়ামতের আলোচনা, অনুচ্ছেদ নং-১০/২০১৩৯
[10] মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদ : জান্নাতে মুমিন ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করবে না, হাদিস নং ৫৪।
[11] মুসলিম, কিতাবুল বির, পরিচ্ছেদ, অসুস্থদের দেখতে যাওয়া বিষয়ে আলোচনা।
[12] মুসলিম কিতাবুজ যিকর, পরিচ্ছেদ, কুরআন তিলাওয়াতের জন্য একত্র হওয়া বিষয়ে আলোচনা।
[13] মুসলিম কিতাবুত তাহারাহ, পরিচ্ছেদ: ওজুর পর দু’আ বিষয়ে আলোচনা।
[14] বুখারি, হাদিস নং-২০৭১০।
[15] বুখারি কিতাবুল মারাদ্ব, পরিচ্ছেদ: যার চোখ নষ্ট তার ফযিলত সম্পর্কে আলোচনা।
[16] মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াসিলা, পরিচ্ছেদ: মাতা-পিতার খেদমতকে প্রাধান্য দেয়া বিষয়ে আলোচনা।
[17] সুনানে তিরমিযি, হাদিস: ১৯০০
[18] মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াসসিলা, পরিচ্ছেদ: রাস্তা হতে কষ্টদায় বস্তু সরানো বিষয়ে আলোচনা।

আরো পড়ুন : এসো জান্নাতের পথে – পর্ব ১
Source: Quraneralo

0 Reviews