দুনিয়ার আকর্ষণ

দুনিয়ার আকর্ষণ

Author:
Price:

READ MORE

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

সংকলনঃ শাদমান
দুনিয়া আমাদের এই ভাবেই টানছে!!

…পার্থিব জীবন তো ব্যক্তিগত জিনিষপত্রের ছলনা ব্যতীত কিছুই নয়।” (কুরআন ৫৭ : ২০) 
২০। তোমরা [ সকলে ] জেনে রাখ, এই পৃথিবীর জীবন হচ্ছে খেলাধূলা ও আনন্দ ফুর্তির ৫৩০২, আড়ম্বর, পারস্পরিক অহংকার [ প্রদর্শন ] এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান -সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগীতা ব্যতীত আর কিছু নয়। এর উপমা ৫৩০৩ হচ্ছে বৃষ্টি, এবং যার দ্বারা উৎপন্ন শষ্য সম্ভার যা কৃষকদিগের [ হৃদয়ে ] আনন্দ দান করে ৫৩০৪। শীঘ্রই তা শুকিয়ে তুমি তা পীতবর্ণ ধারণ করতে দেখবে, অবশেষে তা শুকিয়ে চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে যায়। [ পাপীদের জন্য ] পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং [ পূণ্যাত্মাদের জন্য] রয়েছে আল্লাহ্‌র নিকট থেকে ক্ষমা এবং [ তাঁর ] সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন তো ব্যক্তিগত জিনিষপত্রের ছলনা ব্যতীত কিছুই নয়। ৫৩০৫

৫৩০২। দেখুন অনুরূপ আয়াত [ ৬ : ৩২ ] এবং টিকা ৮৫৫। এই আয়াতে সাধারণ মানুষের পার্থিব জীবনের উদ্দেশ্যকে আরও বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। পার্থিব জীবনে মানুষ “ক্রীড়া কৌতুক ” অর্থাৎ আনন্দ, ফুর্তিতে মেতে থাকে এবং পরলোকের চিন্তা ও মৃত্যুর ভাবনা সে একবারও ভাবে না। শুধু তাই-ই নয়, জীবনের বিভিন্ন সফলতাকে সে আত্মগরিমা ও অহংকারের বস্তুতে পরিণত করে। ক্ষমতার দম্ভ, সম্পদের অহংকার, সন্তানদের সফলতার কৃতিত্ব, প্রভৃতি সৌন্দর্যের অহংবোধ ইত্যাদি জীবনের বিভিন্ন বৈচিত্র তারা পরস্পর পরস্পরের নিকট অহংকারের ও গর্বের বিষয় ও প্রদর্শনের বস্তুরূপে উপস্থাপন করতে ভালোবাসে। এর ফলে মানুষ পৃথিবীর জীবনের সমস্তটাই ব্যয় করে থাকে সম্পদের সংগ্রহে এবং সঞ্চয়ে ; ক্ষমতা ও প্রভাব প্রতিপত্তি লাভের পিছনে। এ ব্যাপারে একজন অন্যজনকে প্রতিদ্বন্দীরূপে কল্পনা করে। মানুষের এই স্বাভাবিক প্রবণতা সর্বযুগেই বিদ্যমান ছিলো এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
৫৩০৩। দেখুন আয়াত [ ৩৯ : ২১ ] ও টিকা ৪২৭৩ ; যেখানে অনুরূপ উপমার উপস্থাপন করা হয়েছে। সেই একই উপমা এখানে উত্থাপন করা হয়েছে তবে এর মাধ্যমে যে উপদেশ প্রদান করা হয়েছে তা পূর্বের আয়াতের উপদেশ থেকে সামান্য আলাদা। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ পাপী, পূণ্যাত্মা সকলের জন্য সমান যেমন আল্লাহ্‌ প্রদত্ত বৃষ্টিধারা, তা সমভাবে বর্ষিত হয়। ধনীর প্রাসাদে ও গরীবের কুড়েতে ; পূণ্যাত্মা ও পাপীর শষ্যক্ষেত্রেও সমভাবে বর্ষণ করে থাকে। কিন্তু মানুষ কি ভাবে আল্লাহ্‌র নেয়ামত বৃষ্টিকে গ্রহণ করে ? ভালো কৃষক তার জমিকে উর্বরতা ও ফসলের বৃদ্ধির কাজে বৃষ্টির পানিকে ব্যবহার করে ফলে প্রচুর শষ্য ঘরে তুলতে সক্ষম হয়। অপরপক্ষে যে কৃষক বৃষ্টির পানিতে আগাছা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে – আগাছার সবুজ তাকে যতই মোহিত করুক না কেন – শেষ পর্যন্ত তা শুকিয়ে খড়ে পরিণত হবে এবং কৃষকের ঘরে কোন শষ্যই আসবে না। এই উপমার সাহায্যে মানুষের চেতনাতে আঘাত হানা হয়েছে যে যারা পার্থিব জীবনের চাকচিক্য, সম্পদ,ক্ষমতা ইত্যাদি ক্ষণস্থায়ী বস্তু নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তারা আধ্যাত্মিক জীবনের কোনও ফসলই ঘরে তুলতে সক্ষম হবে না। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ তাদের জীবনে ঐ আগাছার বৃদ্ধির ন্যায় শুধুমাত্র গর্ব, অহংকারের ন্যায় পাপেরই জন্ম দেবে। প্রকৃত মুত্তাকীর গুণাবলী অর্জনে সহায়ক হবে না। ঐ আগাছার ন্যায় এক সময়ে তা শুকিয়ে পীতবর্ণ খড়ে পরিণত হবে – কোনও শষ্য উৎপন্ন করবে না। অর্থাৎ পরলোকের জীবনের জন্য কোনও আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি অর্জন করবে না।

৫৩০৪। ‘Kuffar’ – আবৃত করা। এখানে অনুবাদ করা হয়েছে কৃষক, যেহেতু সে মাটি দ্বারা বীজকে ঢেকে দেয়। কিন্তু সাধারণ ভাবে শব্দটি দ্বারা সত্যকে প্রত্যাখানকারী বোঝানো হয়। এখানে উপমার মাধ্যমে এরূপ লোককেই বোঝানো হয়েছে।

৫৩০৫। দেখুন অনুরূপ আয়াত [ ৩ : ১৮৫ ] ও টিকা ৪৯২ ] এই পার্থিব জীবনে মানুষ যা পাওয়ার জন্য দিন রাত্রি সাধনা করে যা নিয়ে সে দম্ভ ও অহংকার করে তা শয়তানের প্রতারণা ব্যতীত আর কিছু নয়। কারণ এসব বস্তু ক্ষণস্থায়ী। এদের স্থায়ীত্ব শুধুমাত্র পার্থিব জীবনেই। প্রকৃত স্থায়ী সম্পদ যা পরলোকেও বহন করে নেয়া যাবে তা হচ্ছে আল্লাহ্‌ নির্দ্দেশিত সৎ জীবন যাপন থেকে উদ্ভুদ গুণাবলী যা আত্মাকে করে সমৃদ্ধ ও আলোকিত।

(আবদুল্লাহ্‌ ইউসুফ আলীর ইংরেজী তাফসীর অনুসরনে অনুবাদ)

Source: Quraneralo

0 Reviews